বিশেষ প্রতিনিধি ::
সুনামগঞ্জে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের শান্তিগঞ্জ উপজেলার সড়ক সংস্কারের কাজে প্রকাশ্যে দুর্নীতি ও অনিয়ম করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ারিং।
এর মধ্যে ভিমখালী-নোয়াখালি সড়কের প্রায় ১০ কিলোমিটার প্রশস্তকরণের কাজে মাটি ভরাট করতে গিয়ে সড়ক সংলগ্ন সরকারি খাস জমি থেকে মাটি কেটে নিচ্ছে ঠিকাদারের লোকজন। এতে মাটি ভরাটের বরাদ্দের প্রায় ৩ কোটি টাকা পকেটে ঢুকবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের।
এদিকে মাটি ভরাটের এই কাজে নিয়োগ দিয়েছে স্থানীয় প্রভাবশালী চক্রকে। তারা সড়কের পাশের সরকারি খাস জমি থেকে মাটি কেটে সড়ক ভরাট করার পাশাপাশি এই মাটি প্রতিষ্ঠানেরই সড়কটির অন্যত্র ট্রাকযোগে বহন করে ব্যবহার করছে। সড়কের গোড়া থেকে মাটি উত্তোলন করায় হুমকিতে পড়েছে গুরুত্বপূর্ণ বন্যা বিধ্বস্ত এই সড়কটি।
২০২২ সালের বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্পে এই সড়কের জরুরি কাজ চলছে।
সুনামগঞ্জ স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ‘এডিবির জরুরি সহায়তায় বন্যা ২০২২-এ ক্ষতিগ্রস্ত গ্রামীণ অবকাঠামো পুনর্বাসন প্রকল্প’ নামে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে ৯.৭০০ কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণ, পুনঃনির্মাণ ও সংস্কারের কাজ শুরু করে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর।
৩২ কোটি টাকা ব্যয়ে এই কাজে প্রায় তিন কোটি টাকার মাটি ভরাটের জন্য বরাদ্দ রয়েছে। চলতি বছরই কাজ শেষ করার কথা। কিন্তু এখনো অর্ধেক কাজও শেষ হয়নি। তাই সময় বাড়ানোর পাঁয়তারা চলছে বলে জানা গেছে। দরপত্রে সড়কটির একটি অংশে ‘অন্যস্থান থেকে পরিবহন করে মাটি ভরাট’ করার কথা থাকলেও প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালীকে ম্যানেজ করে সড়কটির গোড়া থেকে সরকারি খাসভূমির মাটি কেটে সড়কে দিচ্ছে এবং এই মাটি ট্রাকযোগে অন্যত্র নিয়ে জড়ো করে রাখছে। সরকারি খাসভূমি থেকে মাটি কাটায় এতে প্রতিষ্ঠানটির সাশ্রয় হচ্ছে বরাদ্দের অধিকাংশ টাকা। তবে রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। পাশাপাশি সড়কের গোড়া থেকে মাটি কাটায় ঝুঁকিতে পড়েছে সড়কটি।
স্থানীয়রা এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারের নিয়োগকৃত প্রভাবশালীরা তাদের হুমকি ধমকি ও মামলার ভয় দেখাচ্ছে। সরেজমিনে সড়ক সংস্কারের মালামাল স্তূপ করে রাখা মুক্তাখাই পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, সড়কের কাজে ব্যবহৃত বালু, পাথর নিম্নমানের।
রডের মধ্যে ‘বাংলা রড’ও মিক্স করা আছে। এছাড়াও ব্লক নির্মাণের সময় বালু, পাথর ও সিমেন্টের অনুপাতও ঠিক রাখা হচ্ছেনা। একইভাবে সেতু ও কালভার্টের কাজেও বালু-পাথর-সিমেন্ট ও রডের অনুপাত ঠিক রাখা হচ্ছেনা।
অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর শান্তিগঞ্জের এসও শাহীন মিয়াকে ম্যানেজ করে এই অনিয়ম করছে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান।
এ বিষয়ে শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কাছ থেকে তথ্য নিতে চাইলে কোনও তথ্য ও কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন এসও শাহিন। তিনি সড়ক নির্মাণে নিয়োজিত প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজাররা সাংবাদিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানিয়ে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যান।
শান্তিগঞ্জের ডালা গ্রামের কৃষক নবাব আলী বলেন, ভিমখালী-নোয়াখালি সড়কটির কাজে যে মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে তা সড়কের পাশের অধিকাংশই সরকারি খাসজমির মাটি। তাছাড়া একেবারে গোড়া থেকে মাটি কেটে সড়কে দেওয়া হচ্ছে। এতে শুরু থেকেই ঝুঁকিতে আছে সড়কটি। আমরা চাই সরকারি নিয়ম মেনে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি কাজ করুক।
নির্মাণ প্রতিষ্ঠান ডেল্টা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. শামীম হোসেন বলেন, ইস্টিমেটে পরিবহনযোগ্য ও সড়কের পাশ থেকে মাটি তোলা-দুটির কথাই রয়েছে। আমরা এলজিইডির শাহীন সাবকে জানিয়েই সব কাজ করছি। কাজে কোনও অনিয়ম হচ্ছেনা বলে দাবি করেন তিনি।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাজেদুল আলম বলেন, আমি নতুন এসেছি। এসও শাহিন সাহেব এসব কাজ তদারকি করেন। কোনও অনিয়ম ও দুর্নীতি হলে আমি ব্যবস্থা নেব।
নিউজটি আপডেট করেছেন : SunamKantha
ভিমখালী-নোয়াখালী সড়কে ৩২ কোটি টাকার কাজ
বরাদ্দের ৩ কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান
- আপলোড সময় : ১৪-০৫-২০২৫ ১২:০৪:১৯ পূর্বাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৪-০৫-২০২৫ ১২:০৭:২২ পূর্বাহ্ন

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ